গল্প-একদিন
লেখাঃসাহিদ ইসলাম
স্কুল থেকে এসে যেন মনে হচ্ছে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল।সব যেন হারিয়ে ফেলেছি।জীবনটা খালি হয়ে গেল।মমতাময়ী হারিয়ে গিয়েছে।আমাকে ছেড়ে সারা জীবনের জন্য চলে গিয়েছে।স্কুল থেকে ফিরেই বাসায় মানুষের আনাগোনা দেখতে পেয়েছিলাম।নিজের রুমে ব্যাগ রেখে দেখতে পেয়েছিলাম
মায়ের রুমে অনেকজন মানুষ।কান্নার শব্দ পাচ্ছি।সামনে যেতেই কিছু বুঝতে বাকি রইল না।চোখে অন্ধকার দেখছি।মাথায় জ্বীম ধরে গেছে।সবকিছু চক্কর খাচ্ছে।বুকের ভিতর জ্বালা করছে।রুমটায় সবাই আছে।বাবা নিঃশব্দে বসে আছে।আমার ভাইও আছে। কাঁদছে। বিছানার উপর মায়ের দেহ।স্কুল থেকে আসার পর আগের দিনগুলোর মতো মা ভাত বেড়ে দিচ্ছে না।আজ সারাজীবনের জন্য ঘুমিয়ে গেলেন।আজ আমার সবচেয়ে মমতাময়ী মানুষটাকে চির বিদায় দিতে হবে।আস্তে আস্তে বিছানার সামনে গেলাম।বাবা আমাকে বুকে নিয়ে কেঁদে দিলেন।আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে না।বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে।আমি একদৃস্টে চেয়ে আছি মায়ের দিকে। ভাই আর বোনটা কাঁদছে। বোনটা অঝরে কাঁদছে। আমি কাঁদতে পারছি না কেনো।।।। ভিতরটা পাথর হয়ে গেছে।নিঃশব্দে বসেই আছি মেঝেতে।আরো পরে মাকে গোসল করানো হবে।বাবা আমাকে টাকা দিলেন কাফনের কাপড় আর বাকি জিনিসগুলো আনতে।টাকা নিয়ে হাটা দিলাম।মনে হচ্ছে আমি হেটে যাচ্ছি না যাচ্ছে নিথর এক দেহ।সে প্রথম থেকে মুখ দিয়ে একটা শব্দ বের করতে পারিনি।রিক্সায় উঠে আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।শব্দ করে কাঁদছি। পৃথিবীর সব কষ্ট যেন আমার কাছে এসে জমা হয়েছে।আমার কান্নার কারনে রিক্সাওয়ালা বার বার ফিরে দেখছে।আমার মা গতকাল কতো সুস্থ ছিল কিন্তু আজ হঠাৎ করে আজ সারাজীবনের জন্য চলে গেল।মায়ের সাথে সকালেই কথা বলেছিলাম।মা আমাকে সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় ভাত খাইয়ে দিয়েছিল।আমি এখন কার হাতে ভাত খাব।মায়ের হাতে মাখানো ভাতের স্বাদ কি কোথাও পাব।পাব না কখনো না।আমার মা আমাদের ভাইবোনদের অনেক কষ্ট করে বড় করেছে।মা আমাদের মাঝেই নিজের সুখ খুঁজেছে।শৌখিনতা কি জিনিস মা জানত না।একটা কাপড় দুই তিন বছর ধরেও পড়তে দেখেছি।নতুন জামা কিনত না।টাকা জমিয়ে রাখত আমাদের ভবিষ্যৎ এর জন্য।বাবার সামান্য আয়ে মা অনেক সুন্দর করে আমাদের চালাতেন কিন্তু নিজেরা কষ্ট করতেন।কষ্ট আমাদের বুঝতে দিত না।তবুও আমরা বুঝতাম আমাদের খরচের জন্য মায়ের হিমসিম খেতে হচ্ছে।মা নিজের পিছনে কিছু খরচ করতেন না।সময়গুলোতে ভাবতাম বড় হলে মাকে কখনো কস্টে রাখব না।মা আমাদের জন্য কষ্ট ভোগ করেছে।আর যাতে কষ্ট করতে না হয়।স্বপ্ন ছিল নিজের প্রথম আয় দিয়ে মাকে একটা শাড়ি কিনে দিব কিন্তু তা হলো না তার আগেই মা চলে গেল।মা সুখ ভোগ করে যেতে পারেনি।শুধু অভাবটাই ভোগ করেছে।রিক্সায় বসে কথাগুলো শুধু ভিতরে আঘাত দিয়ে যাচ্ছে।রিক্সা থেকে নেমে কাফনের কাপড় আর বাকি জিনিসগুলো কিনে নিয়ে বাড়িতে ফিরে এলাম।আজ বাড়ির বাতাসও ভারী।আকাশেও কস্টের ছায়া।মাকে গোসল করানোর পর সাদা কাপড় পড়িয়ে খাটিয়ায় শোয়ানো হলো।জানাযা পড়ানো হবে।মায়ের স্বপ্ন ছিল আমাদের দুই ভাইয়ের যেকোনো একজন তার জানাযা পড়াবে।কিন্তু তা আর পূরন হলো না।জানাযা শেষে মাকে শেষ বারের মতো দেখে নিলাম।আর কখনো আমার মায়ের মায়াবী মুখখানা দেখা হবে না আর কখনো না।অনেক্ষন চেয়ে ছিলাম।মাকে আর দেখতে দেওয়া হয়নি।মায়ের লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কবরের দিকে।ভিতরটা যেন ফেটে যাচ্ছে। সবসময়ের জন্য চলে যাচ্ছে মা আমাদের ছেড়ে।মন চাইছে মায়ের সাথে আমিও যাই। চোখের পানি অনবরত পড়ছেই।ঝড়নার পানি যেমন পাথর ফঁেটে পড়ে ঠিক তেমনি আবার ভিতর থেকে কান্না হচ্ছে।মাকে কবরে শোয়ানো হচ্ছে।দৃশ্যটা যে কতো বেদনার তা কখনো বলে বোঝানো যায় না।মায়ের কবরে নিজে হাতে মাটি দিলাম।কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ফিরলাম।পরিবারের আজ আসল মানুষটাই নেই যে সবাইকে আগলে রাখত।
হঠাৎ করে আমার চোখদুটো খুলে গেল।ভয়ে হাত পা কাঁপছে। চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।।জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি।মহান আল্লাহ্ তায়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম পুরো ঘটনাটা স্বপ্নে থাকার কারনে বাস্তবে ছিল না বলে।
একদিন
Reviewed by Sahidul Islam Sahid
on
July 24, 2019
Rating:
No comments: